BENGALI PARAGRAPH
দৈনন্দিন জীবনে
বিজ্ঞানের প্রভাব
ভূমিকা- বর্তমান যুগ হল বিজ্ঞানের যুগ। আমাদেরদৈনন্দিন জীবনের
প্রতিটি ক্ষণে জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে
ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমারা যা কিছু ব্যবহার করি, সে সবই বিজ্ঞানের দান। আমাদের চারপাশে
যা কিছু চোখে পড়ে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে বিজ্ঞান জড়িত রয়েছে।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদধন্য হয়ে মানুষ প্রকৃত অর্থেই আধুনিক মানুষ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানের
জয়যাত্রা
আদিম মানুষের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল আগুন
জ্বালাতে শেখা। এতদিন পর্যন্ত মানুষ যে আগুন দেখে ভয়ে শিউরে উঠতো সেই আগুনকে বশ
করে নিজের কাজে লাগালো। মানুষের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল চাকা। বর্তমানে
মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে অপরিসীম উন্নতি করেছে তার মূলে রয়েছে এই চাকা। আর,
যে আবিষ্কারের সুবাদে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পেরেছে, সেটা হল বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ
আবিষ্কার হওয়ার পরই প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সূচিত হয়েছিল।
বিদ্যুৎশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কার করতে লাগল এবং
মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটাল। যাইহোক, বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে।
প্রাত্যহিক জীবনে
বিজ্ঞান
আযাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিস
বিজ্ঞানের দান। বাড়ি তৈরির জন্য রড, সিমেন্ট, রঙ হোক বা বাড়িতে ব্যবহৃত
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন পাম্প, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ফ্যান, হিটার, গিজার,
এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি সবকিছুর মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। এই তালিকায় রয়েছে প্রেসার
কুকার, মাইক্রোওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, মিক্সার, জুসার প্রভৃতি। এইসব যন্ত্রপাতি
আধুনিক জীবনকে সহজতর করে তুলেছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে
বিজ্ঞান
চিকিৎসাক্ষেত্রেও বিজ্ঞান কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।আগে
যেসব রোগে মানুষ যারা যেত, এখন সেইসবরোগের ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার ফলে মানুষের
গড়আয়ু অনেক বেড়ে গেছে। এখন ক্যানসার রোগেরওচিকিৎসা সম্ভব। তাছাড়া, বিভিন্ন
ধরণের যন্ত্রপাতিআবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়েছেএবং শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রেও
অনেক উন্নতি ঘটেছে।
কৃষি ও শিল্প
ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং অত্যাধুনিক
যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আবার, শিল্পের
আঙিনায় বিজ্ঞানের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। শিল্প কারখানায় উন্নতমানের
যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে
বিজ্ঞান
প্রাচীন ভারতের শিক্ষার্থীরা গুরুকুলে শিক্ষালাভকরত।
ব্রিটিশরা এদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাপ্রবর্তন করেছিল। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে
সঙ্গেপ্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।পাঠদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটার
ব্যবহার করে সাধারণক্লাসরুমকে স্মার্ট ক্লাসরুম করা হচ্ছে। এখনপাঠ্যপুস্তকের
জায়গা কেড়ে নিয়েছে অডিও-ভিজ্যুয়াল স্টাডি মেটেরিয়াল। ইন্টারনেট
ব্যবস্থারউন্নতির ফলে এখন ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে অনলাইনকোচিং নিতে পারছে, অনলাইন
টেস্টও দিতেপারছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার
উন্নতি
বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও
চরম উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ এখন “দূরকে করেছে নিকট”।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে হলে মানুষের কাছে দূরত্বটা আর কোনো বাধা নয়। জল,
স্থল এবং বায়ুপথে মানুষ এখন পৃথিবী পরিক্রমা করতে পারে। তাছাড়া, মানুষের তৈরি
রকেট এখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে।
মনুষ্য এবং পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি তথ্য আদানপ্রদানের
ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান আজ সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিফোনের
যুগ পেরিয়ে আমরা এখন মোবাইল জামানায় এসে পৌঁছেছি। হাতের তালুতে থাকা স্মার্টফোন
ব্যক্তিমানুষকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
বিনোদন ক্ষেত্রে
বিজ্ঞান
বিনোদনের জগতে বিজ্ঞানের প্রথম অবদান ছিল চলচ্চিত্র বা
সিনেমা। পর্দায় মানুষের নড়াচড়া দেখে সেদিন মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল। এরপর মানুষের
বিনোদনের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল রেডিও এবং টেলিভিশন। সিনেমা, রেডিও এবং টিভি-
বিনোদনের এই তিন মাধ্যম নিয়ে মানুষের আশ্চর্য সীমা ছিল না। সেদিন কেউ ভাবতে
পারেনি যে একদিন মানুষ তার পকেটে সমগ্র জগতের বিনোদন-ভান্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াবে।
স্মার্টফোন আবিষ্কার হওয়ার ফলে এমনটাই ঘটেছে। বর্তমানে বিনোদন হল সম্পূর্ণ
মোবাইল-কেন্দ্রিক।
উপসংহার
একথা ঠিক যে, বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবন আরামদায়ক করে
তুলেছে। কিন্তু সমস্যাটা হল আরামের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে আমরাও যন্ত্রনির্ভর
হয়ে যাচ্ছি। যে মানুষ যন্ত্র তৈরি করেছে সেই মানুষ যদি যন্ত্রের দাস হয়ে যায়
তাহলে দুশ্চিন্তার অবকাশ থেকেই যায়। তাছাড়া, পরিবেশের কথাটাও যাথায় রাখতে হবে।
আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে অনেক সময় পরিবেশের ক্ষতি করে ফেলি। যেমন, এসি বা ফ্রিজ
ব্যবহার করলে সেগুলি থেকে ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন গ্যাস নির্গত হয় যা পরিবেশের
পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মানবসভ্যতার স্বার্থে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিজ্ঞানের
ব্যবহার করাই কাম্য।
বাংলার উৎসব
ভূমিকা:
“বাংলার মাটি,
বাংলার হাওয়া, বাংলার ভাষা, বাংলার গান বাংলার উৎসবে যেন মেতে ওঠে বাঙালির প্রাণ।“
মানব হৃদয় চির আনন্দ পিপাসু। রবি ঠাকুর সেই কোন কালে
বলেছিলেন, আনন্দধারা বহিছে ভুবনে। সেই আনন্দ ধারায় আমরা বাঙালিরা কতকাল ধরেই না
গা ভাসিয়েছি। উৎসব শব্দটি শুনলেই যেন মনে হয় কোথা থেকে একরাশ আনন্দ সিক্ত মেঘ
আমার হৃদয় আকাশে তার ইচ্ছে ডানা বিস্তার করে। হ্যাঁ, আমি জানি উৎসবের সাথে কোন
জাতি দীর্ঘ সংস্কৃতি ইতিহাস জড়িয়ে থাকে কিন্তু নিরেট আনন্দ উপভোগ করাটাই আমার
লক্ষ্য। আবার আমাদের বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত বারো মাসে তেরো পার্বণ অর্থাৎ
বছরে একটার পর একটা উৎসব লেগেই থাকে।
উৎসব কি:
উৎসব মানে আনন্দ, উচ্ছাস, ভেদাভেদ নয়। উৎসব মানে প্রকৃত
স্বর্গের নীড় রচনা; উৎসব মানে বিবেক, প্রীতি, প্রেম উৎসব মানে মনুষত্ববোধের
জাগরণ। কবির ভাষায়-
“প্রীতি প্রেমের
পূর্ণ বাঁধন যবে মিলি পরস্পরে স্বর্গ এসে দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।“
সামাজিক উৎসব:
আমাদের সামাজিক মেলবন্ধনের অন্যতম প্রতীকবাহি নানান সামাজিক
অনুষ্ঠান। এককালে গ্রামের চন্ডী মন্ডলের কোলে নানান আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন হত।
এখন ক্রমশ: আধুনিকতার দিকে ধাবমান সমাজে রাখিবন্ধন, জন্মদিন, পৈতে গ্রহণ,
ভাতৃদ্বিতীয়া, দোল উৎসব, বিবাহ অনুষ্ঠান প্রভৃতি কিছুটা হলেও আনন্দের রসদ বয়ে
আনে। যাই হোক ক্রমশ: যান্ত্রিকতার কিষ্ট সমাজে এই উৎসবগুলি যেন সামাজিক মেলবন্ধন
স্থাপন করে।
পারিবারিক উৎসব:
মানুষ সামাজিক জীব আর পরিবার তার অংশবিশেষ। তবে কাজের
তাগিদে এবং জীবিকার সন্ধানে পরিবারের প্রিয় মানুষগুলিকে দূরে সরে যেতে হয়।
কিন্তু কোন পারিবারিক অনুষ্ঠান আবার তাদের একত্রিত করে। তখন যেন মনে হয়, এক
মরুময় পথ যাত্রায় এক পশলা বৃষ্টি। পারিবারিক উৎসবের মধ্যে পড়ে বিবাহ অনুষ্ঠান,
পৈতে গ্রহন, অন্নপ্রাশন, ভ্রাতৃতীয়া প্ৰভৃতি।
উৎসবের একাল ও
সেকাল:
বর্তমানে উৎসব বলতে বোঝানো হয় আলোকসজ্জা, মন্ডপসজ্জা,
জাকজমকএতে নেই কোন প্রাণ বন্দনা, নেই কোন আন্তরিকতা, নেই কোন প্রীতি প্রেমেরপণ্য
মন।অথচ পূর্বে উৎসব বলতে বোঝানো হতো সত্যিকারের আন্তরিকতা।আলোকসজ্জা বা জাঁকজমক না
থাকলেও সমর উৎসব মা নেই ছিল প্রীতি ওপ্রেমের মায়াবী বান্ধন।
ধর্মীয় উৎসব:
ধর্ম মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। এক কালে মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনের
দাস হয়ে জীবন কাটিয়েছে। কিন্তু আজ ক্রমশ আধুনিকতার দিকে ধাবমান বাঙালি উৎসবকে
ধর্মীয় গণ্ডির বন্ধনেই আবদ্ধ রাখেনি, তাকে গড়ে তুলেছে বিশ্ব মানবের মিলনস্থলে।
তাই কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন-
“এত বঙ্গ
ভঙ্গদেশে তবু রঙ্গে ভরা।“
ঋতুভিত্তিক উৎসব:
আবার আসিব ফিরে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে। কবি জীবনানন্দ
দাশের কবিতার এই লাইন নবান্ন আজও বাঙালির জীবনসঙ্গী। খাদ্য রসিক বাঙালি পৌষ
পার্বণের ভোজন রসেও মেতে ওঠে। তারপর-
“বাতাসে বহিছে
প্রেম নয়নে লাগিল নেশা কারাযে ডাকিছে পিছে বসন্ত এসে গেছে....
শান্তিনিকেতনের শান্ত শ্যামল প্রকৃতির পায়ে এই বসন্ত উৎসব
বাঙালির জীবনে রামধনুর রং বিস্তার করে।
জাতীয় উৎসব:
সবার আগে আমি ভারতীয়। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব, সংহতি
রক্ষা 2রা অক্টোবর গান্ধী জন্মজয়ন্তী, ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন, ২৬ শে
জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবস, ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন একান্ত অনিবার্য।
মানুষের ওপর
প্রভাব:
দুর্গাপুজোর দশমীর দিন মন বড়ই ভারাক্রান্ত লাগে। কোথা থেকে
একরাশমুখভাড় করা মেঘ যেন হৃদয় আকাশে চেয়ে থাকে। সেই দিন আমি উপলব্ধিকরি যে উৎসব
যদি না থাকতো তাহলে জীবন মৃত্যুরই নামান্তর হত।
উপসংহার:
আনন্দবাজার পত্রিকায় একবার দেখেছিলাম-
“আজ থাক দলাদলি,
মারামারি, আজ সন্ধিপুজো।”
খুব ভালো হতো যদি আমরা উৎসবের জোয়ারে মনের সমস্ত ভেদ ধুয়ে
দিয়েনতুনভাবে মনকে প্রতিষ্ঠিস্থাপিত করতে পারতাম। তবেই এই সমাজ হত আরোউন্নত, আরো
উজ্জ্বল।
বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল বাংলা রচনা
ভূমিকা :
মানুষ আজ একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখেছে। বিজ্ঞানের রথে চড়েই
তার এই বিজয়যাত্রা,কৌতুহলী মানুষের মন আবিস্কার করে ফেলেছে জীবন ও জগতের নানা
গোপন রহস্য। সে আজ জেনে গেছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ম, নিয়মের ফল। তার অমিত
শক্তির সীমাহীন বিস্তারের কথাও সে আজ জেনে গেছে। শুধু তাই নয় সে আজ এ কথাও বুঝেছে
তার অসীম শক্তির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ধ্বংসেরবীজ। ধ্বংসের এই বীজ তলা তৈরী হয়েছে
মানুষের বৈজ্ঞানিক সাফল্যের মাটিতেই।তাই মানুষ আজ যেমন গর্বিত তেমনি শঙ্কিতও বটে।
বিজ্ঞানের দুইটি
রূপ :
বিজ্ঞানের সহায়তায় আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। এর বিস্ময়কর
অবদান আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না। বিজ্ঞানের শক্তি আমাদের বাহুকে শক্ত ও
সভ্যতাকে পরিপুষ্ট করে তুলেছে । কিন্তু বিজ্ঞানের অপব্যবহারে আমরা ক্ষতিগ্রস্তও কম
হইনি। গড়ার ও ভাঙ্গার এ দুই শক্তিতেই বিজ্ঞান প্রচণ্ড । - কাজেই বিজ্ঞান সুফল ও
কুফল। বিজ্ঞান ভূত্যরূপে আমাদের সেবায় নিয়োজিত , কিন্তু কর্তারূপে পৃথিবীর ধ্বংস
সাধনে উদ্যত
মানব সভ্যতার
অগ্রগতিতে বিজ্ঞান :
একদিন অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীর প্রথম মানুষ সূর্য ওঠা
দেখেছিল। ঝর, তুফান,বিদ্যুতের আকস্মিক ঝলকানির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একদিন সে
আতঙ্কিতহয়েছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ভয়ংকর রূপ দেখে মানুষ সেদিন
স্তম্ভিতহয়েছিল। ভয়ে আর আতঙ্কে সেই প্রাকৃতিক শক্তিকে তাই তারা পুজো করতে
শুরুকরেছিল। এরপর একদিন আগুন আবিস্কার হল। মানুষ জেনে ফেললজলস্থলের রহস্য। সরে গেল
অন্তরীক্ষের যবনীকা। যুক্তি আর বুদ্ধি দিয়ে সেবিচার করে নিল বিশ্বকান্ডের সমস্ত
কার্যকারণ সম্পর্ক।
আর তার পর থেকেই মানুষ জানতে শুরু করল নানা রোগব্যাধির
কারণ।অকালমৃত্যু,মহামারি কমে এল শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠল বসুন্ধরা কারখানারসাইরেন
জানিয়ে দিল বিশ্ববাসী আজ কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ছে। দূর-দূরান্তরেরএমন কি মহাকাশের
নানা সংকেতও পৌঁছে দিয়েছে বিজ্ঞান। মানব সভ্যতারচালকের আসনে ধীরে ধীরে ওঠে এল
বিজ্ঞান। মানুষ কে করে তুলে থাকলঅনেকটাই কর্মহীন। আর এখান থেকেই দেখতে শুরু করলাম
বিজ্ঞানেরবিপরীতে অন্য এক ছবি।
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই শুরু হয় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে গড়ে
তোলার প্রয়াস। প্রাচীনকালে জীবনযাপনের এক পর্যায়ে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন
আবিষ্কার করতে শেখে, শিকারের জন্য গাছের ডাল ও পাথর দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি
করতে শেখে। আর তখন থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞানের পদযাত্রা। তারপর থেকে বিজ্ঞানকে
ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হয়ে উঠে। যে
পৃথিবী ছিল অপার বিস্ময় ও রহস্যের স্থান, সে পৃথিবীকে মানুষ হাতের মুঠোয় নিয়ে
এসেছে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে। বিজ্ঞানের বলে মানুষের কাছে অসম্ভব বলে আর কিছু নেই।
নেপেলিয়ন বলেছেন- “Impossible is a word, which is only found in the
dictionary of fools.” বিজ্ঞানের বলেই
এই কথাটি আজ চরম সত্য।
শিক্ষাক্ষেত্রে
বিজ্ঞানের ভূমিকা :
প্রাচীন শিক্ষাপদ্ধতির তুলনায় বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে
আমূল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে শিক্ষকরা চক, ডাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবর্তে
মাল্টিমিডিয়া রুমে ক্লাস নিচ্ছেন। বর্তমানে অতি সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব
ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে সহজেই করা যায়। টেলিভিশন, বেতার যেমন বিজ্ঞানের আবিষ্কার
তেমনি শিক্ষার উপকরণ কম্পিউটারও বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এটি
শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য নিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারে মাধ্যমে
নিজেরাই বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারছে যা পূর্বে কখনোই করা যেত না।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাবিশ্বের বিখ্যাত লেখদের বই,
বিভিন্ন দেশেরশিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে মুহুর্তের মধ্যেই জানা যায়। আধুনিক
বিজ্ঞাননির্ভরশিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকরা যেমন পেয়েছে স্বস্তি ছাত্র-ছাত্রীরাও
হয়ে উঠেছে স্ব-নির্ভর। এই অবস্থাকে আরো গতিশীল করতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীতা
অপরিসীম।
প্রাত্যহিক জীবনে
বিজ্ঞানের ভূমিকা:
প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পর থেকে আমরা যেভাবে জীবন শুরু করি তার
প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ছায়াপাত রয়েছে। প্রতিদিন সকালবেলা সবার ঘরে ঘরে
পৌঁছে যায় সংবাদপত্র। যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের সব ধরনের ঘটনার খবর পাই। গ্রামীণ
জীবনের তুলনায় শহরের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের ছোঁয়া বেশি। সকালবেলার চা,
নাস্তা, সারাদিনের খাবার তৈরির জন্য গ্যাস, স্টোভ, বৈদ্যুতিক চুল্লীর দরকার হয়।
খাবার গরম করার জন্য ওভেন, সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর সবই বিজ্ঞানের আবিষ্কার।
তবে বিজ্ঞানের প্রভাব এখন আর শহরে সীমাবদ্ধ নয় গ্রামাঞ্চলেও এর প্রভাব বিস্তৃত
হচ্ছে।
টেলিভিশন, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি বিনোদনের অন্যতম উপায়।
এছাড়াও দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত টেলিফোন, মোবাইল, ই-মেইল, ফ্যাক্স, বিভিন্ন
যানবাহন বিজ্ঞানেরই আবিষ্কার। নিত্যনতুন আরো প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কারের জন্য
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
— বিজ্ঞানের
কুফল :
মানুষ আজ বিজ্ঞানের হাত ধরেই ক্রমশই যন্ত্রনির্ভর হয়ে
পড়েছে। বিজ্ঞান মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে তা আমাদের ক্রমশই করে
তুলেছে পরমুখাপেক্ষী। আমরা ক্রমশই আরামপ্রিয় কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছি। অন্যদিকে
বিজ্ঞানের হাত ধরে সমাজে কর্মস্থানও ক্রমশই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কাজ হারাচ্ছে
মানুষ। অন্যদিকে পৃথিবীতে জনসংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সমাজে বেকারত্ব
বাড়ছে। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ লাভের অঙ্ক বাড়াতে পারে বলেই কর্মসংস্থানের
সুযোগ ক্রমে কমে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞানের অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের
ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, জলদূষণের ফলে পৃথিবীতে রোগব্যাধি
বাড়ছে। বহু প্রজাতি সহ পশু পাখিও আজ ধ্বংসের প্রহর গুনছে।মারণাস্ত্রে ভরে গেছে
নানা দেশের অস্ত্রভান্ডার। পরমাণু বোমা তো আছেই, তাছাড়া জীবাণু বোমার আতঙ্কেও
মানুষ আজ মানব প্রজাতি ধ্বংসের আতঙ্ক বুকে নিয়ে প্রহর গুনছে।
উপসংহার :
অমিত শক্তিধর মানুষ বিজ্ঞানের হাত ধরেই সাধনায় সিদ্ধি
পেয়েছে। এই শক্তি সাধনার ফলশ্রুতিতে মানব জীবনে ঘটেছে যান্ত্রিকতা। তার মনের
সুকুমার বৃত্তিগুলি আজ ধ্বংসের পথে অথচ বিজ্ঞান মানব জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য
দিয়েছে,তাকে অস্বীকার করার ক্ষমতাও আজ আর মানুষের নেই। তাই বিজ্ঞানের কল্যাণি
মূর্তির পাশাপাশি ধ্বংসের ছবিও আমরা আজ লক্ষ করি। কোন্ মূর্তিতে সে মানুষের জীবনে
দেখা দেবে তা মানুষকেই ঠিক করে নিতে হবে।
পরিবেশ দূষণ ও তার
প্রতিকার
অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল,চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরামায়ু। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা:
উদ্ভিদ ও প্রাণি জগত সহ যে প্রাকৃতিক পরিবেস্টনের মধ্যে
আমরা বাস করি, সাধারণভাবে তাকে বলা হয় পরিবেশ। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য
বিশুদ্ধ পরিবেশের একান্ত প্রয়োজন। মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখল সেদিন
থেকেই শুরু হল পরিবেশ দূষণ। প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে আমরা
পরিবেশ দূষণ বলে থাকি। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের তীব্রতার ফলে মানব সভ্যতা একবিংশ
শতাব্দীতে এক গভীর সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
মানব সভ্যতার
অগ্রগতি ও দূষণের সূত্রপাত:
মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত
আগুন আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানব সভ্যতা কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেও সূচিত হলো
প্রাণের ধাত্রী অক্সিজেনের ধ্বংসলীলা। নির্বিচারে বৃক্ষছেদন এবং নগনারায়ণ
ধরিত্রীকে করে তুলল মরুর মতো রক্ষ, পবিত্র নদী বক্ষে নিক্ষেপিত হল কল কারখানার
বিষাক্ত বজ্র পদার্থ। আনবিক ও পরমানবিক বোমার তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে পড়ল
আকাশে বাতাসে। তাই বড় দুঃখ ও ব্যথায় মর্মস্পর্শী আবেদন-
দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।
পরিবেশ দূষণের
প্রকারভেদ:
সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ১)
প্রাকৃতিক দূষণ ২) মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ। আগ্নেয়গিরির অগ্নুপাত, দাবানল, বালুঝড়
প্রভৃতি কারণ গুলি হল প্রাকৃতিক দূষণ। এইসব প্রাকৃতিক দূষণের প্রতিকার সাধারণত
প্রকৃতি নিজের হাতে করে দেয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ হলো মারাত্মক। যানবাহনের
ধোয়া, কলকারখানার দূষিত বজ্র পদার্থ, রাসায়নিক ব্যবহার, পারমাণবিক পরীক্ষা-
নিরীক্ষা, যুদ্ধ আরো নানা কারণে পৃথিবী ভয়ংকর ভাবে দূষিত হয়ে চলেছে। দূষণ বলতে
তাই মনুষ্যসৃষ্ট দূষণকে বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা বলতে পারি- God made the country and man made the town. মনুষ্য সৃষ্টি এই পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত
করা যায়। যথা- জল দূষণ, বায়ু দূষণ, ভূমি দূষণ, শব্দ দূষণ প্রভৃতি।
সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ১)
প্রাকৃতিক দূষণ
২) মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুপাত, দাবানল, বালুঝড় প্রভৃতি কারণ গুলি
হল প্রাকৃতিক দূষণ। এইসব প্রাকৃতিক দূষণের প্রতিকার সাধারণত প্রকৃতি নিজের হাতে
করে দেয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ হলো মারাত্মক। যানবাহনের ধোয়া, কলকারখানার
দূষিত বজ্র পদার্থ, রাসায়নিক ব্যবহার, পারমাণবিক পরীক্ষা- নিরীক্ষা, যুদ্ধ আরো
নানা কারণে পৃথিবী ভয়ংকর ভাবে দূষিত হয়ে চলেছে। দূষণ বলতে তাই মনুষ্যসৃষ্ট
দূষণকে বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা বলতে পারি- God made the country and man made the town. মনুষ্য সৃষ্টি এই পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত
করা যায়। যথা- জল দূষণ, বায়ু দূষণ, ভূমি দূষণ, শব্দ দূষণ প্রভৃতি।
বায়ুদূষণ:
বিশুদ্ধ বাতাস ছাড়া মানুষ সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারেনা।
অসংখ্য যানবাহন ও কলকারখানা থেকে প্রতিমুহূর্তে নিগদ দূষিত ধোঁয়া বাতাসে
কার্বনডাই-অক্সাইড- এর মত দূষিত গ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে
চলেছে। এর ফলে কমে যাচ্ছে জীবনদায়ী অক্সিজেন এর পরিমাণ।
জলদূষণ:
জলই জীবন। কলকারখানার দূষিত বজ্র পদার্থ, শস্যক্ষেত্রে
ব্যবহৃত রাসায়নিক স্যার ও কীটনাশক ওষুধ এইসব নানা কারণে প্রতিনিয়ত জল দূষণ ঘটে
চলেছে। এই পরিনামে মানুষ ও জীবজগৎ নানাবিদ রোগের শিকার হচ্ছে। এমনকি পানীয় জল
মানুষের প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
ভূমি দূষণ :
কৃষি ও শিল্প বিপ্লবী ভূমিদূষণের কারণ। কৃষিতে নানাভাবে
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ভূমি দূষিত হচ্ছে। শিল্প কলকারখানার বজ্র
পদার্থ ও শহর এলাকার আবর্জনার স্তুপ মাটিকে দূষিত করছে।
শব্দ দূষণ:
দূষণ শুধু বায়ুতে নয়, জলে নয়, শব্দেও। যানবাহনের হর্নে,
কলকারখানার আওয়াজ, মাইকের আওয়াজ, বাজি পটকা শব্দ, আধুনিক জীবনের এক বড় সমস্যা।
শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণ ক্ষমতার বিলুপ ঘটে, এমন কি মানসিক বিপর্যয় দেখা যায়।
বিশ্ব উষ্ণায়ন:
পরিবেশ দূষণের চরমতম রূপ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। সমগ্র বিশ্ব
জুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে চির হিমানির দেশেও বরফ গলবে। সমুদ্র উঠবে ফুলে ফেপে। আর
সূক্ষ্ম অঞ্চল হবে আরো সূক্ষ্মতার। এই সংকটের মুহূর্তে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের
ভাষায় বলা যায়-
এই নদী, এই মাটি বড় প্রিয় ছিল এই মেঘ, এই রৌদ্র, এই
বাতাসের উপভোগ আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি।
প্রতিকার:
পরিবেশ দূষণ প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম মানুষকে সচেতন করে
তুলতে হবে। কলকারখানা, যানবাহন প্রভৃতি আধুনিক জীবনের উপকরণ গুলিকে আজ আর বর্জন
করা সম্ভব নয়, সুতরাং অগ্রগতিকে বজায় রেখে কিভাবে দূষণ রোধ করা যায়, সে বিষয়ে
চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে, বৃক্ষরোপণ ও
বন সংরক্ষণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে
সহযোগিতামূলক মনভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
উপসংহার:
সুস্থ পরিবেশের উপরেই নির্ভর করেছে সুস্থ জীবন। সভ্যতার
অগ্রগতির অন্ধ প্রতিযোগিতা থেকে ব্যক্তিগত সুখ ছন্দের মরিয়া তাগিত থেকে নিজেদের
যুক্ত রাখতে হবে। প্রত্যেক বছর ৫ই জুন পরিবেশ দূষণ পালন করলেই হবে না, পরিবেশ
দূষণের করাল গ্রাসকে প্রতিহত করার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে প্রতিমুহূর্তে।
আমাদের শপথ নিয়ে সংকল্প করতে হবে-
যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
-সুকান্তভট্টাচার্য
ছাত্রজীবনে
খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
ভূমিका:
“All work and no play makes Jack a dull boy”–ইংরাজি এই প্রবাদটির মধ্যে ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্বটি
লুকিয়ে আছে। স্বামী বিবেকানন্দ খেলাধুলাকে গীতা পাঠ অপেক্ষা শ্রেয় মনে করতেন।
ছাত্রজীবন হল ভবিষ্যতের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। কৃষক যেমন বীজ বপনের আগে আগাছা
নির্মূল করে জমিকে চাষের উপযুক্ত করে নেয়, তেমনি ছাত্রমনে বিদ্যার বীজ বপনের আগে
দেহকে সুস্থ ও সবল করতে হবে। খেলাধুলা হল সুস্থ-সবল দেহগঠনের একমাত্র উপায়।
ছাত্রজীবনে তাই খেলাধুলা একান্ত অপরিহার্য। খেলাধুলার মাধ্যমে শুধু শরীরচর্চা নয়,
পারস্পরিক সৌহার্দ্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব, নেতৃত্ব শক্তি প্রভৃতি চারিত্রিক গুণের
প্রকাশ ঘটে।
খেলাধুলার গুরুত্ব:
সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শরীর ঠিক
রাখার জন্য চাই শরীরচর্চা। উন্নত দেশে (যেমন জাপানে) কলকারখানায় কাজ শুরুর আগে এই
ব্যায়ামচর্চা করা হয়। এর দ্বারা কাজে মন আসে, কর্মশক্তির বিকাশ হয়। সেজন্য
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিফিনের সময় বা অন্য সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খেলাধুলার
ব্যবস্থা রয়েছে। সকলেই জানে স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যবান শরীর সুখ সম্পদের
অধিকারী। যারা অসুস্থ দুর্বল, রুগ্ন তারা জীবনযুদ্ধে পদে পদে পরাস্ত হয়।
বিভিন্ন ধরণের
খেলাধুলা:
সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বে নান ধরণের খেলাধুলা প্রচলিত
রয়েছে। প্রাচীন গ্রীসেও খেলাধুলাকে অগ্রাধিকার দিতে অলিম্পিক গেমসের সূচনা হয়।
আধুনিক বিশ্বেও খেলাধুলার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কাবাডি
প্রভৃতি দলবদ্ধ খেলার পাশাপাশি নানা ধরণের ব্যক্তিগত খেলাও বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে।
ব্যায়াম, সাঁতার, দৌড়, হাইজাম্প, লং জাম্প প্রভৃতি খেলাগুলিও এখন যথেষ্ট
জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
চরিত্র গঠনে
খেলাধুলা:
খেলাধুলা ছাত্রদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। খেলার মাঠে
পারস্পরিক সহযোগিতা, খেলাধুলায় উদার মানসিকতা, চরিত্র গঠন, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা,
নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি গুণগুলি জাগ্রত হয়। বিদ্যালয়ে ছাত্রদের পড়াশোনার
একঘেমেয়ি দূরীকরণ খেলাধুলার মাধ্যমে ঘটে। খেলাধুলার মাধ্যমে একটা উদার বা
স্পোর্টসম্যান স্পিরিট মনোভাব গড়ে ওঠে যার দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন – হয় সুন্দর।
জাতি গঠনে
খেলাধুলা:
সুস্থ সবল জাতিগঠনে খেলাধুলা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। তাই
জীবনের প্রাতঃকাল থেকে প্রতিটি মানুষের শরীরচর্চার জন্য খেলাধুলার আবশ্যক।
খেলাধুলা করলে শরীরচর্চা ও শরীর গঠন হয়, আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রবণতার
তৈরী করে। একের সংকল্প তখন মিশে যায় দলগত সংকল্পে।
জাতীয়তাবোধে
খেলাধুলা:
খেলাধুলা ছাত্রদের জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তোলে। খেলাধুলায়
দেশের সাফল্যে দেশবাসী জাতীয়তাবোধে গর্বিত অনুভব করে। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিক
ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অভিনব বিন্দ্রার স্বর্ণপদক লাভ, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের
বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়লাভ বা টোকিও অলিম্পিক ২০২০২তে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড ক্রিয়ায়
বর্ষা নিক্ষেপনে নীরাজ চোপড়ার স্বর্ণপদক জয় দেশবাসীর জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপ্ত করেছে।
খেলায় যারা অংশগ্রহণ করে অথবা দর্শক হিসেবে যারা খেলা দেখে খেলার প্রভাব কেবল
তাদের মধ্যেই সীমিত নয়, বিস্তৃত হয় জাতি ধর্ম বর্ণসম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত
দেশবাসীর উপর।
আধুনিক জীবনে
খেলাধুলা:
আধুনিক যুগ কৃত্রিমতার যুগ, যান্ত্রিকতার যুগ। প্রাচীনকালে
মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। কিন্তু এখন জীবনে সর্বক্ষেত্রে
যন্ত্রের অধীনে। যন্ত্রই কাজ করে মানুষ দাঁড়িয়ে বা বসে তা চালনা করে। ফলে
শারীরিক পরিশ্রম হয় নিতান্ত। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক
পরিশ্রম অনেক বেশি হয়।
মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে সমতা রেখে শরীর চালনা না হলে
বিভিন্ন ধরণের অসুখের কবলে পড়তে হয়। ক্ষুধামন্দ, অনিদ্রা, প্রভৃতি শারীরিক
পরিশ্রমের অভাবে ঘটে। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেলাধুলা ও
শরীরচর্চা বাঞ্চনীয়। ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলায় করলে তাদের শরীর ও মন দুই ভালো
থাকে। খেলাধুলা মানুষকে শক্ত সমর্থ করে তোলে। মানুষকে তার চরিত্র গঠনে সাহায্য করে
জীবন যুদ্ধে জয়ী করে।
ছাত্রজীবনে
খেলাধুলার গুরুত্ব:
লেখাপড়া ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য হলেও খেলাধুলার গুরুত্বও
কম নয়। দেহকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে খেলাধুলার আশ্রয় নিতেই হবে। খেলা শিক্ষার্থীর
মনের মুক্তি ঘটায়। খেলাধুলার মাধ্যমে সংহতি এবং সৌভ্রাতৃত্ব মজবুত হয় এবং
নেতৃত্বদানের ধারণা তৈরী হয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনা না ঘটলে
দেহে নানান ধরণের রোগ বাসা বাঁধে। রোগমুক্ত শরীর না হলে ভালোভাবে পড়াশোনা করা
যায় না। যারা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকে, তাদের অনেকেই বড় হয়ে স্বার্থপর এবং
দৈহিক দিক থেকে দুর্বল হয়। সেই কারণে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা খেলাধুলাকে আবশ্যিক
করা হয়েছে।
উপসংহার:
“অধ্যয়নই
ছাত্রদের তপস্যা”– একথা সত্য হলেও শরীরচর্চা বা খেলাধুলাকে কখনোই অবহেলা করা
যায় না। পড়াশোনার জন্য মনোবলের পাশাপাশি সুস্থ সবল শরীর দরকার। তাছাড়া
খেলাধুলার মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম ও সংহতি বোধ গড়ে
ওঠে। খেলাধুলা এবং লেখাপড়াকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারলেই একজন ছাত্র আগামীদিনে
পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
শিক্ষাবিস্তারে
গণমাধ্যমের ভূমিকা
ভূমিকা:- শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, আজকের আধুনিক-বিশ্ব মিডিয়ার
দ্বারা প্রভাবিত। মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ব আজ মানুষের বাড়ির আঙিনায় উপস্থিত
হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত বিশ্বের যে কোনো জায়গার খবর ও চিত্র আজ আমাদের
সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, ইন্টারনেট প্রভৃতির
মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে শিক্ষালাভ সহজ ও সুগম হয়েছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো
উন্নতশীল দেশের গণজাগরণের ক্ষেত্রে এই গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত।
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম দূরকে করেছে নিকট, শত্রুকে করেছে মিত্র, জানিয়েছে কত
অজানাকে, তেমনি আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নেতিবাচক দিকও শিক্ষাবিস্তারে কোনো কোনো
ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ডেকে আনছে। ফলে জনজীবনে তার প্রভাব পড়ছে।
গণমাধ্যম কী:- যে মাধ্যমের দ্বারা বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ
পেয়ে উপকৃত হয় তাকে গণমাধ্যম বলা যেতে পারে। বহু প্রাচীনকাল থেকে লোকশিক্ষার
উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন মাধ্যম। যেমন কীর্তন, কবিগান, মঙ্গলগান,
ছড়া, ব্রতকথা, লোকগাথা, কথকতা, পুতুলনাচ ইত্যাদি। এগুলি ছিল যুগপৎ লোকশিক্ষা ও
লোক-মনোরঞ্জনের প্রধান উপাদান। ক্রমে বিজ্ঞানের উন্নতিতে সংবাদপত্র, বেতার,
চলচ্চিত্র, দূরদর্শন, টেপরেকর্ডার, ইন্টারনেট প্রভৃতি মাধ্যমের প্রচলন হয়।
গণমাধ্যমের
উপযোগিতা:- শিক্ষাবিস্তারে
গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ আজকের বিশ্বের উন্নতিতে গণমাধ্যমগুলি
সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমগুলি যেমন মানুষের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি
দেয়, মানুষকে আনন্দ দেয়, তেমনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা মানুষের
শিক্ষাবিস্তারে সহায়ক হয়ে ওঠে। খবরের কাগজ, রেডিও, টিভি তাই আজকের মানুষের কাছে
অন্যতম উপাদান। এইসব উপাদানগুলি মানুষের শিক্ষাবিকাশে ও সচেতনতা বিস্তারে সক্রিয়
ভূমিকা গ্রহণ করে।
সংবাদপত্র:- আধুনিক যুগে গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব আজ
সর্বস্তরে প্রসারিত। শুধু শহর নয়, সুদূর গ্রামেও কোনো চা-এর দোকানে সংবাদপত্র
পাঠের জন্য মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। রাজনীতি থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত সব
শ্রেণির সংবাদ, সংবাদপত্র থেকে মানুষ গ্রহণ করে। রাজনীতি, খেলাধুলা, কৃষি, শিল্প,
বাণিজ্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি যাবতীয় খবর পাওয়া যায় সংবাদপত্রে।
দেশ-বিদেশের সেইসব নানান খবরের আলোকেসাধারণ মানুষের চেতনার বিস্তার ঘটে। বিশেষ করে
জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষ যে শিক্ষালাভ করে, তার দ্বারা
যথেষ্ট উপকৃত হয়। তাই সংবাদপত্র শুধু শিক্ষাবিস্তারে নয়—আধুনিক জীবনের অপরিহার্য
উপাদান।
বেতার:- জনজীবনে বেতারের ভূমিকাও যথেষ্ট। ভারতবর্ষে গণমাধ্যম
হিসেবে বেতার এখনো সবচেয়ে বড় মাধ্যম। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সব শ্রেণির মানুষ যারা
দূরদর্শন ব্যবহার করতে পারে না, তারা বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন খবর যেমন পায়,
তেমনি মনোরঞ্জনের উপাদানও খুঁজে পায়। বিশেষ করে বেতারের নানা চ্যানেল ও
দিনরাত্রিব্যাপী অনুষ্ঠান থেকে, শিক্ষার্থী থেকে আরম্ভ করে সাধারণ গৃহস্থ পর্যন্ত
সকলে উপকৃত হয়। একজন কৃষকের কাছে বেতারের কৃষিকথার আসর তার জীবিকার উন্নতির
ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। তাই সাধারণ গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে,
সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেতারের বিকল্প নেই।
দুরদর্শন:- বেতারের মতো দূরদর্শনও শিক্ষা ও চেতনার বিস্তারে
শক্তিশালী গণমাধ্যম। শিশু থেকে কৃষ্ণ, কৃষিজীবী থেকে বুদ্ধিজীবী, শহরবাসী থেকে
গ্রামবাসী সকলের কাছে দূরদর্শনের প্রভাব যথেষ্ট। ছাত্রসমাজও দূরদর্শনের দ্বারা
উপকৃত হয়। যেমন ক্যুইজ, সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান, পরীক্ষা স্পেশ্যাল, জানা-অজানা,
তরুণদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে। আজকের
ছাত্রসমাজ যে ব্যাপকভাবে দূরদর্শনের দ্বারা প্রভাবিত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
শ্রব্য ও দৃশ্য মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের গুরুত্ব অপরিসীম।
চলচ্চিত্র:- লোকশিক্ষা ও লোক-মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের
গুরুত্ব অপরিসীম। কাহিনিচিত্র, নিউজরিল, ডকুমেন্টারি চিত্র প্রভৃতি থেকে মানুষের
জ্ঞান ও চেতনার প্রসার ঘটে। অবসর যাপনে, চরিত্র গঠনে, নীতিশিক্ষার প্রসারে,
সাংস্কৃতিক বোধের প্রসারে চলচ্চিত্র আধুনিক জীবনের অন্যতম গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমের কুফল:- শিক্ষাবিস্তারে যেমন গণমাধ্যমগুলির গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি
অতিরিক্ত ব্যবহার ও যথোচিত ব্যবহারের অভাবে তার কুফলও পড়ছে মানুষের উপর। আজকের
অতিরিক্ত মিডিয়ার চাপ মানুষকে ক্রমশ বিপথে পরিচালিত করছে—কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
বিশেষ করে ছাত্রজীবনে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দূরদর্শনের কুফলগুলি প্রভাবিত করছে।
অতিরিক্ত দূরদর্শন-নির্ভরতা দেখা যাচ্ছে শহর ও গ্রামের নারীদের। বিভিন্ন সিরিয়াল
দেখার প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনকে করছে দুর্বিষহ। কোনো কোনো ছাত্র দূরদর্শনে হত্যার
দৃশ্যের অনুকরণে বাস্তবজীবনে তা সংঘটিত করে ফেলছে। সংবাদপত্রেও যেভাবে রাজনীতির
হিংসা-বিদ্বেষকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ হিংসায় লিপ্ত হয়ে
পড়ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে কুরুচিকর বিজ্ঞাপন শিক্ষায় কুফল ডেকে আনছে। বেশ কিছু
সিরিয়াল মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের মানসিক গঠনে কুপ্রভাব ফেলছে।
উপসংহার:- সব জিনিসেরই ভালো-মন্দ আছে; তবে মন্দের কথা ভেবে পিছিয়ে
থাকলে হবে না, গণমাধ্যমগুলিকে শিক্ষা ও চেতনার বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিতেই হবে।
তবে সেই সঙ্গে একথাও স্বীকার করতে হবে, আজ এই মুক্ত অর্থনীতির যুগে খোলা হাওয়ার
পরিবেশে কিছু রক্ষাকবচ রেখে গণমাধ্যমের সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে ছড়িয়ে দিতে হবে জনমানসে।
গণমাধ্যম যদি শিক্ষাবিস্তারে ইতিবাচক দিকগুলিকে মেলে ধরতে পারে, তাহলে তার
সুদূরপ্রসারী প্রভাব অবশ্যম্ভাবী।
সাহিত্য পাঠের
প্রয়োজনীয়তা
সূচনা :
ভাষার জন্ম হয়েছে নিজের ভাব অন্যের কাছে তুলে ধরার জন্য। আর
ভাষাকে মহিমান্বিত করেছে সাহিত্যের স্বপ্নীল ছোঁয়া। সাধারণ একটি কথাই সাহিত্যিকের
স্পর্শে হয়ে উঠে অনন্য। তুচ্ছ একটি কথা সাহিত্যিকের মুখে এসে নতুন জীবন লাভ করে।
সাহিত্য ভাষাকে উপমা, অলংকার, আর শব্দের ব্যঞ্জনায় করে তোলে শ্রুতিমধুর। সাহিত্য
পাঠে মনের যে বিশালতার সৃষ্টি হয় তা আকাশের বিশালতাকেও হার মানায়।
সাহিত্য কী ?
‘সহিত’ শব্দ হতে সাহিত্য শব্দের উৎপত্তি। যার ধাতুগত অর্থ
হচ্ছে মিলন। এ মিলন শুধু ভাবের সাথে ভাষার নয়। এ মিলন মানুষের সাথে মানুষের,
অতীতের সাথে বর্তমানের,দূরের সাথে নিকটের। সাহিত্যকে আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে
ব্যাখ্যা করতে গেলে শ্রীশচন্দ্র দাসের ভাষায় বলতে হয়- ‘নিজের কথা, পরের কথা, বাহ্য
জগতের কথা সাহিত্যিকের মনোবীণায় যে সুরে ঝংকৃত হয় তার শিল্পসংগত প্রকাশই সাহিত্য।’
সাহিত্যের
উদ্দেশ্য:
সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের মনকে জাগানো। এই জাগরণ মানব
মনকে করে তোলে সুশোভিত। মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী। এই সুন্দর মানুষের মনকে
গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়। আর জগতে সাহিত্যই হলো একমাত্র শুদ্ধতম জিনিস যা মনের
গভীরতম স্থানে প্রবেশ করে। ভালো কোনো কবিতা কিংবা গল্প আমরা সহজেই ভুলে যাই না।
বরং তা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে মনের মানসপটে ভেসে উঠে। আর সাহিত্য এইখানেই তার
উদ্দেশ্যে শতভাগ সফল। সাহিত্যের শুদ্ধ চর্চা মানুষের মনকে নিয়ে যায় এক অনন্য
উচ্চতায়।
মানবজীবনে সাহিত্য:
সাহিত্য হলো আমাদের চোখের মতো যা ক্ষুদ্র অথচ চারপাশের সব
কিছুকে বিশালাকারে দেখতে পায়। সাহিত্যকর্ম সে গল্প, কবিতা, উপন্যাস যাই হোক না
কেনো তা মানুষের অন্তরের অনুভূতিকে প্রকাশ করে। সমাজের মূল্যবোধ, সমসাময়িক সকল
চিন্তার সৃজনশীল প্রকাশের মাধ্যম হলো সাহিত্য। সাহিত্য ও সমাজ: কবি-সাহিত্যিকরা
কল্পনা নির্ভর হলেও বাস্তবের বাইরে নন। তাই তাদের সৃষ্ট সাহিত্যকে এককথায় সমাজের
দর্পণ বলা যায়। শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় তৎকালীন সমাজের রূপ আমাদের সামনে
উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল কিংবা সুকান্তের লেখায় ফুটে উঠেছে সমাজ
চিত্র, সাম্যের গান। মানবজীবনের জয়গান শুধু সাহিত্যিকের বীণাতেই ঝংকৃত হয়েছে
বারবার। সুতরাং সাহিত্যকে সমাজের বাইরে
কল্পনা করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সাহিত্য আর সমাজ একই সুঁতোয় গাঁথা।
সাহিত্য পাঠের
উদ্দেশ্য:
সাহিত্য পাঠের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মনকে আনন্দ দেয়া। সেই
আনন্দদানের ভেতর দিয়ে যদি কোনো জ্ঞানার্জন হয় তবেই তা সার্থকতা লাভ করে। কারণ
একমাত্র সাহিত্যেই মানবাত্মা খেলা করে এবং তার আনন্দ উপভোগ করে।
সাহিত্যের
বিস্তৃতি:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “যে দেশে সাহিত্যের অভাব সে
দেশের লোক পরস্পর সজীব বন্ধনে আবদ্ধ নহে, তাহারা বিচ্ছিন্ন।” সাহিত্য হলো এমন
বন্ধন যা অতীতকে বর্তমানের সাথে দারুণভাবে এক করে দিয়েছে। সাহিত্যের সূত্র ধরেই
মানুষ তার শিকড়ের টানে ছুটে যায়। সাহিত্যের বিস্তৃতি শুধু কবিতার ছন্দে আর গল্পের
লাইনে আবদ্ধ নয়। আকাশের যেমন সীমানা নেই তেমনি সাহিত্যও বিস্তৃত মানব সভ্যতার
দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
সাহিত্য পাঠের
মূল্য:
সাহিত্য মানুষের মননকে যতটা বিকশিত করে ততটা বিকাশ লাভ আর
কিছুতে হয় না। সাহিত্য মানবাত্মাকে তৃপ্তি দানের পাশাপাশি নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।
সাহিত্যের স্নিগ্ধ জলে ম্লান করা পরিশীলিত মন কখনোই জগতের অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে
না। সাহিত্য চর্চা মানব মনকে জাগতিক ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দান করে। মুক্ত আত্মাই
কেবল শুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে সভ্যতার বাতিঘরে অতন্দ্র প্রহরী হতে পারে। সুতরাং সাহিত্য
পাঠের মূল্য জগতের যেকোনো কিছুর বিচারে শ্রেষ্ঠ।
উপসংহার :
ফুল যেমন বাগানকে সুশোভিত করে, সাহিত্য তেমনি ভাষাকে অলংকৃত
করে। সাহিত্য না থাকলে পৃথিবীতে এত গান, সুর, গল্প, কবিতা জন্মাত না। নীরস
পৃথিবীকে সরস রাখতে সাহিত্য তাই অনুক্ষণ জেগে থাকে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অন্তরকে
জাগ্রত রাখতে, মনকে আন্দোলিত করতে, চিত্তকে আকর্ষিত করতে সাহিত্য পাঠের কোনো
বিকল্প নেই।
কোন মন্তব্য নেই